আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১২:৪৯

সোনাগাজীতে চরাঞ্চলে ভূমিদস্যুদের কালোথাবা বিষক্রিয়ায় পাঁচশতাধিক ভেড়ার মৃত্যু

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

সোনাগাজী, ফেনী প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজীতে চরাঞ্চলে ভূমিদস্যুদের কালোথাবার বিষক্রিয়ায় পাঁচশতাধিক ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি খাস ও বন বিভাগের চর আবদুল্লাহ বিটের প্রায় বিশ হাজার একর চারণ ভূমি জবর দখল করে নিয়েছে একটি প্রভাবশালী ভূমি দস্যু সিন্ডিকেট। বনবিভাগ দশটির অধিক মামলা করেও ভূমিগুলো উদ্ধার করতে পারেনি। জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও খাস জমিগুলো উদ্ধারে নেই কোন তৎপরতা। প্রভাবশালী ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসন যেন অসহায় হয়ে পড়েছে। ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের লোকজন সরকারি জমিগুলো জবরদখল করে নির্বিঘ্নে মাছ চাষ করছে। আর এসব পুকুরের দূষিত ও বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে ভেড়ার পাল। প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হলেও খামারিরা ভয়ে মামলা করতে পারছেননা। গত এক সপ্তাহে উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া ও চর আবদুল্লাহ এলাকায় ১০জন খামারির পাঁচশতাধিক ভেড়া মারা যায়। হঠাৎ করে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে খাবার ও পানি খেয়ে ভেড়া মারা যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। একই সঙ্গে চরাঞ্চলে মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন কারনে ঘাস ও গবাদিপশুর চারণ ভূমি ছোট হয়ে আসায় গোখাদ্য নিয়ে নতুন করে খামারিরা চিন্তায় পড়েছেন। পাঁচশতাকি ভেড়া মারা যাওয়ায় খামারিদের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

খামারীরা ও উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় শতাধিক ভেড়ার খামারি রয়েছেন। একেক খামারি একশ-এক হাজারেরও বেশি করে ভেড়া রয়েছে। চরাঞ্চলে প্রাকৃতিক খাবার, নোনা ও মিঠা পানি পান করে বেঁচে থাকে ভেড়াগুলো।

গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে বিভিন্ন খামারে অসুস্থ্য হয়ে খামারে ও মাঠে ঘাস খাওয়া অবস্থায় ভেড়া মারা যাচ্ছে। ভেড়া মারা যাওয়ার ঘটনায় খামারিরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে খামারিরা বিষয়টি উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা নেবু লাল দাসকে জানান। তিনি সরেজমিনে গিয়ে ভেড়াগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করেন। পরে একটি মৃত ভেড়াকে ফেনীর আঞ্চলিক পশু হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্তে দেখায় যায় ভেড়াগুলো খাদ্যে বিষাক্রিয়ায় মারা গেছে। এরপর খামারিরা অবশিষ্ট ভেড়া নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার খামারি মো. নাজমুল হাসান বলেন, তার খামারে প্রায় চারশতাধিক ভেড়া রয়েছে। চরে ভূমিদস্যিদের জবরদখলকৃত একটি মৎস্য খামারের পানি খেয়ে ভেড়াগুলো হঠাৎ করে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। গত এক সপ্তাহে তার খামারের প্রায় ২০০ ভেড়া মারা গেছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সরেজমিনে গিয়ে ভেড়াগুলোকে পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেন। কিন্তু কোন ভাবে ভেড়া মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেননা। পরে তার পরামর্শে একটি মৃত ভেড়াকে ফেনীর একটি পশু হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করে দেখা যায় প্রতিটি ভেড়া বিষাক্ত কোন খাবার বা পানি খেয়েছে। এতে করে বিষক্রিয়ায় ভেড়াগুলো মারা যাচ্ছে। এরপর থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে সুস্থ্য ও অসুস্থ ভেড়াগুলোকে খামার থেকে বের না করে খামারে রেখেই পরিচর্যাসহ খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।

এছাড়া একই এলাকার খামারি ফকির আহম্মদের ৯০টি, মো. হানিফের ৮৫টি, আবুল কাশেমের ৪৫টি, মো. রফিকের ৫০টি, হেদায়েত উল্যাহর ৫টি, মোবারক হোসেনের ৮টি, ওয়াজি উল্যাহর ৮টি, মো. নোমানের ৬টি, আবুল হাসেমের ৭টিসহ ১০জন খামারির অন্তত পাঁচশতাধিক ভেড়া বিষক্রিয়ায় মারা গেছে। খামারি মো. রফিক বলেন, দক্ষিণ চরচান্দিয়া এলাকার খামারে তার দু’শতাধিক ভেড়া রয়েছে। ওই এলাকায় অন্তত ১০-১২জনের খামারের ভেড়ার সঙ্গে তার ভেড়াগুলোও চরে এক সঙ্গে ঘাস খায়। গত চারদিন আগে হঠাৎ করে ভেড়া মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম থেকে ছুটে এসে খামারে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন তার শতাধিক ভেড়া অসুস্থ হয়ে খাবার ছেড়ে দিয়ে মাটিতে শুয়ে আছে। তার খামারের লোকজন তাকে জানায়, চরে জবরদখলকৃত মৎস্য প্রকল্প গুলোর পানি পান করার পর থেকে ভেড়াগুলো হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে। এরপর থেকে অনেকগুলো ভেড়া মারা যায়। বিষয়টি তাকে খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে। পরে তিনি প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন ভেড়াগুলো বিষাক্ত কিছু খেয়ে মারা গেছে।

তিনি বলেন, যে খামারের পানি খেয়ে ভেড়া মারা গেছে সেই মৎস্য খামারটি অবৈধভাবে সরকারি খাস জমি দখল করে স্থানীয় মো. লিটন, ফরিদ হোসেন, আবুল হাসেম ও হক সাহাব নামে চারজন লোক গড়ে তুলেছেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফকির আহম্মদ বলেন, তাদের ভেড়াগুলো প্রতিদিন ওই প্রকল্পে পানি খেতে যায়। তাদের ধারনা প্রকল্পে মাছ না থাকায় অবৈধ দখলদাররা পানিতে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছে। এতে করে পানি খাওয়ার পর ভেড়াগুলো মারা যাচ্ছে। জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা নেবু লাল দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভেড়া মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি দক্ষিণ পূর্ব চরচান্দিয়া এলাকার খামারে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে ভেড়াগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অসুস্থ হওয়ার মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোন ভাবে এর হদিস পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি মারা যাওয়া কয়েকটি ভেড়াকে ফেনীর আঞ্চলিক পশু হাসপাতালে নিয়ে ময়নাতদন্ত করেন। ময়না তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদনে মারা যাওয়া ভেড়ার মধ্যে বিষক্রিয়া উপস্থিতি পাওয়া যায়। মূলত চরে বিষাক্ত কোন খাবার বা পানি খেয়ে ভেড়াগুলো মারা গেছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। আপতত সুস্থ ও অসুস্থ ভেড়াগুলোকে চিকিৎসা দিয়ে কয়েকদিন খামারে রেখে পরিচর্যা ও খাবার খাওয়াতে খামারিদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন।

উপজেলা বন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বন বিভাগের জবরদখলকৃত ভূমি উদ্ধারে ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দশটির অধিক মামলা করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে কেউ কেউ কারাগারে আছেন, কেউ কেউ জামিনে আছেন। এর আগে ভূমি দস্যুদের হাতে বন বিভাগের লোকজন একাধিকবার হামলার শিকারও হয়েছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। সরকারি খাস জমি উদ্ধারে শীঘ্রই সহকারি কমিশার (ভূমি) কে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিএন/৯০

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Scroll to Top