মুরাদনগর, কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ড্রেজারের তান্ডব দিনদিন বেড়েই চলছিল। অনেক গ্রামে কৃষকদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নামে মাত্র মূল্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছিল ফসলী জমি। স্থায়ী কোন প্রতিকার না পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করছে কৃষকরা। কিছু রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার দালাল প্রকৃতির লোকদের ছত্রছায়ায় ভূমি খেকো চক্রটি হয়ে উঠেছিল প্রভাবশালী। যার ফলে নিরিহ কৃষকরা বাধা দিতে গেলেই হুমকির সম্মুখিন হতো । অবৈধ ড্রেজার নিয়ে দ্বন্ধে খুনের মত ঘটনাও ঘটেছে এ উপজেলায়।
বিষয়টি নতুন যোগদানকৃত সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন সুলতানা নিপার নজরে আসে, কৃষি জমি ও কৃষককে বাচাতে জেলাপ্রশাসক খন্দকার মু: মুশফিকুর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলাউদ্দিন ভূইয়া জনির কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে তিনি। গত দুই মাসে তিনি ৫০টির অধিক ড্রেজার ম্যাশিন ৪ হাজার ফুট পাইপ (পরিবহনে সমস্যা থাকায়) বিনষ্ট করেছে। ইতমধ্যে ড্রেজার সিন্ডিকেটের কাছে এক আতঙ্কের নাম নাছরিন সুলতানা। কিছু রাজনৈতিক, জনপ্রতিনিধি, নামধারী সাংবাদিক ও এলাকার দালাল প্রকৃতির লোকদের চক্ষুশুল হয়ে ফসলী জমি রক্ষায় কাজ করছেন তিনি।
রবিবার সকালে উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর, মোচাগড়া, রগুরামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫টি ড্রেজার মেশিন ও ৮০০ফিট পাইপ জব্দ/বিনষ্ট করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন সুলতানা নিপা। এ সময় তাঁর সাথে মুরাদনগর থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও অর্ধশতাধিক দিনমুজুর অভিযান কাজে অংশ নেয়।
উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে অভিযান কালে ঐ সমস্ত এলাকার নিরিহ মানুষরা সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন সুলতানাকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, নয়ন, ইকবাল, ইউপি সদস্য সেলিম মুন্সী, ফোরকান গং ড্রেজার দিয়ে যেভাবে ফসলি জমি ধ্বংস করছিল তাতে কয়েক বছর পর এ গ্রামের কৃষকরা পথে বসতে হতো। নয়ন প্রথমে ৪০ শতক জমিতে ড্রেজার স্থাপন করে এখন এটি ১২ একরে পরিনত হয়েছে। ফসলী জমি রক্ষা করতে গ্রামের লোকজন মিলে অনেকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। যতবার বন্ধ করতে যাই ততবারই রাজনৈতিক নেতাদেরকে তারা ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। কিছুদিন আগে গ্রামের সকলে মিলে ড্রেজার বন্ধ রাখলে, রাতে এসে তাদের দলের মোচাগড়ার ফোরকান কয়েক জনকে হুমকি দিয়ে গেছে, বলেছে ‘তোদেরকে যেন আর ড্রেজারের পাড়ে না দেখি’ যদি দেখি খুন খারাপি হয়ে যাবে। তারা আরো বলেছে সব জায়গা থেকে অনুমতি নিয়েই আমরা ড্রেজার চালাই, উপজেলাতে কেউ যদি অভিযোগ নিয়ে যায় তাদেরকেও মাশুল দিতে হবে। জীবনের ভয়ে গ্রামের সবার মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এসিল্যান্ড আপাকে পেয়ে এ গ্রামে আমরা যারা কৃষক তারা আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেলাম।
সহকারী কমিশনার ভূমি নাসরিন সুলতানা নিপা বলেন, অবৈধ ড্রেজার স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যারা অতিরিক্ত টাকার লোভে ড্রেজার ব্যবসায়ীদের মদত দিচ্ছেন তাদের ভাবতে হবে, একদিন পকেটে অজ¯্র টাকা থাকবে কিন্তু খাবার যদি না থাকে সে টাকা দিয়ে কি হবে! তাই ড্রেজার সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা যারা এ কাজটি করছেন তারা পরবর্তি প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এ অবৈধ ব্যবসা থেকে সড়ে দাঁড়ান, আর তা না হলে আমি কৃষি জমি রক্ষার্থে আরো কঠোর হতে বাধ্য হবো।
উপজেলা নির্বহী অফিসার আলাউদ্দিন ভুঞা জনী বলেন, যখন সুযোগ পাচ্ছি তখনি অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। অবৈধ ড্রেজার সিন্ডিকেটকে নিস্ক্রিয় করতে আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে।
সিএন/৯০