তিতাস, কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দুই গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
এসময় উভয় গ্রুপের ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতরা হলো সরকার বাড়ির মুকবুল সরকারের ছেলে সজিব সরকার (২৫), গোলাম হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৫০), শেখ ফরিদের স্ত্রী শাহিনা বেগম (৩৭), সেলিম সরকারের স্ত্রী সীমা আক্তার (২৩) ও ভূইয়া বাড়ির আনোয়ার হোসেন (৬৫)। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনাটির সূত্রপাত শনিবার সকাল এগারোটায় তিতাস উপজেলার বলরামপুর গ্রামের সরকার বাড়ি ও ভূইয়া বাড়ির মধ্যে। তিতাস থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুর নবী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরে শনিবার বিকাল তিনটায় আবার সরকার বাড়িতে আক্রমণ করে ভূইয়া বাড়ির লোকজন। এতে সরকার বাড়ির ৬-৭ টি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। হামলায় নেতৃত্ব দেন জাহাঙ্গীর, শেখ সাহেব এর ছেলে বাবু, মানজু ভূইয়ার ছেলে রিপন, আলালসহ ২০-২৫ জনের একটি দল। রবিবার সকালেও উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এর ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায় মসজিদের জায়গা নিয়ে সরকার বাড়ির শাখাওয়াত সরকার ও তার সমর্থক ভূইয়া বাড়ির শেখ সাহেব ও তার সমর্থকদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে মারামারি মামলা পাল্টা মামলা চলে আসছে। তারই জের ধরে শনিবার দুই গোত্রের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জরিয়ে পড়েন। এসময় উভয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে এর বেশী কিছু জানেননা বলেও এলাকাবাসী জানান।
এই বিষয়ে ভূইয়া বাড়ির শেখ সাহেবের সমর্থক দক্ষিণ বলরামপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৬৫) এর ছেলে শামিম মিয়া(৪০) বলেন সকালে আমি মাছিমপুর বাজার থেকে আসার পথে আমাদের প্রতিপক্ষ পূর্ব শত্রুতার জেরে বিল্লাল, মনোহর ও সজিব আমাকে মারধর করে। এসময় আমার ছোট ভাই রিপন প্রতিবাদ করলে সরকার বাড়ির লোকজন এসে আমার বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। তিনি আরও বলেন তাদের সাথে আমাদের পূর্ব থেকেই মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে তারই জের ধরে আমাদের ওপর হামলা এবং বাড়ি ঘর ভাংচুর করেছে। আমরা সঠিক বিচার দাবি চাই ।
সরকার বাড়ির লোক মিয়া হাজী (৮০) বলেন,সকালে আমি মাছিমপুর বাজার থেকে দুধ বিক্রি করে বাড়ি আসার পথে দক্ষিণ বলরামপুর আনোয়ার হোসেন (৬৫) এর বাড়ির সামনে আসলে তার ছেলে শামিম মিয়া আমার পথরোধ করে। এসময় শামিমের ছোট ভাই রিপন এসে আমাকে চর থাপ্পড় শুরু করলে আমার ডাক চিৎকার শুনে লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বাড়ি ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
সরকার বাড়ির আলম সরকার বলেন, আমি বাড়ি থাকি না। আমার উপস্থিতি না থাকলেও কেন আমার বাড়ি ঘর ভাংচুর করা হলো? ভূইয়া বাড়ির লোকজন কিছু হলেই আমার বাড়িতে ভাংচুর চালায়। কিন্তু কেন? আমার অপরাধটা কি?
বলরামপুর গ্রামের সাহেব সর্দারদের একজন কবির হোসেন কুতুব বলেন, তাদের উভয়পক্ষের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের হলেও গত কয়েকদিন আগে আ'লীগের মিছিলে যাবার সময় ভূইয়া বাড়ির লোকজন মোটরসাইকেল তুলে দেয় সজিব সরকারের উপর। এটা নিয়ে শুরু হয় কথা কাটাকাটি। পরে লোক মিয়া হাজি বাজার থেকে আসার সময় তাকে চর মারে মানজু ভূইয়ার ছেলে রিপন। যা খুবই দুঃখজনক। পরে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে তিতাস থানা পুলিশ ও ইউপি চেয়ারম্যান নুর নবী এসে সমাধান করে দিবেন বলে আস্বস্ত করেছেন উভয়পক্ষকে।
বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুর নবী বলেন,দক্ষিণ বলরামপুর দুই গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে খবর পেয়ে থানা পুলিশসহ আমি ঘটনাস্থলে যাই এবং তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ মিমাংসা করে দিবো বললে সরকার বাড়ি ও ভূইয়া বাড়ির লোকজনকে বললে, তারা মেনে নেয়।
তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কান্তি দাস বলেন, দক্ষিণ বলরামপুর মারামারির খবর পেয়ে সাথে সাথেই পুলিশ পাঠিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনকে নিবৃত্ত করা হয়। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করে নাই,যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
উল্লেখ্য ২০০৫ সাল থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ভূইয়া বাড়ি বনাম সরকার বাড়ির মধ্যে মসজিদের জায়গা নিয়ে মারামারি, পাল্টাপাল্টি মামলা চলে আসছে। হাইকোর্টে এখনও মামলা চলমান রয়েছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় তৃতীয় একটি পক্ষের ইন্ধনে দীর্ঘদিন যাবত এই বিরোধ চলে আসছে। তারা অর্থের বিনিময়ে পক্ষ পরিবর্তন করে। আজ সরকার বাড়ির পক্ষে তো কাল ভূইয়া বাড়ির পক্ষে। এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল এই দ্বন্দ্বের অবসান চান।
এফআর/অননিউজ