সোনাগাজী ফেনী প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ বিসি (ভবানী চরণ) লাহা স্কুল এন্ড কলেজে গভর্ণিং বডির পাতানো কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা ও অধ্যক্ষ পরস্পর যোগসাজসে নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে এ পাতানো কমিটি গঠনের তোড়জোড় চালাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ নিয়ে সচেতন এলাকাবাসী, অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজমান। শ্রেণি কক্ষে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রুটিন বোর্ডে ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে এবং কোন প্রকার প্রচার-প্রচারণা না চালিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা চলচাতুরির মাধ্যমে ডামি ও পছন্দের লোকদের দিয়ে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আবদুল কাইয়ূম নামে এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, গোপনে পাতানো কমিটি গঠনের তোড়জোড়ের খবর শুনে তিনি গত ৯ অক্টোবর সোমবার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে গেলে অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন তার কাছে মনোনয়ন পত্র বিক্রি করতে অনিহা প্রকাশ করেন। তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝান ক্ষমতাসীন দলের লোকদের অনুমতি ছাড়া তার কাছে মনোনয়ন পত্র বিক্রি করা যাবেনা। আপনী যেহেতে ভিন্নমতের লোক বিএনপি করেন, সেহেতু ঝামেলায় না জড়ালে ভালো হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে আপনাকে মনোনয়ন পত্র দেওয়া হবে। তার এমন আশ্বাসে মনোনয়ন পত্র জমা দানের শেষ দিন অর্থাৎ পরদিন ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে গেলে নানা চলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে দলীয় সিন্ডিকেটের নেতাকর্মীদের পাহারা ও মহড়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে মনোনয়ন পত্র বিক্রি করেননি। সিন্ডিকেটের বাইরে যেন কেউ মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ এবং জমা দিতে না পারে সেজন্য মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষ দিনে শাসক দলের বেশকিছু নেতাকর্মী দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙনে মহড়া এবং পাহারা বসানো হয়। কাগজে তফসিল ঘোষণা করলেও চালানো হয়নি প্রচার-প্রচারণা। গত ২ অক্টোবর তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিলে ৮ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন পত্র বিক্রি, ১০ অক্টোবর মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষ তারিখ, যাচাই-বাছাই ১১ অক্টোবর, প্রত্যাহার ১৫ অক্টোবর এবং ২৫ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে নিজেদের পছন্দের ১৫জন অভিভাবকদের কাছ ১৫টি মনোনয়ন পত্র বিক্রি করলেও যাচাই-বাছাইয়ে ১৪টিকে বৈধ ঘোষণা করেন। অঘোষিতভাবে ১০ অক্টোবর রাতেই পাতানো কমিটি গঠনের জন্য মনোনয়ন পত্র সংগহকারীদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠকও হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
নিজেদের পছন্দের লোকদের নির্বাচিত ঘোষণা দিয়ে আপোষের মাধ্যমে অন্যদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সচেতন এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও নবাবপুর ইউনিয়ন যু্লীগের সভাপতি ফজলুল হক হক সাহাব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গোপনে সিন্ডিকেটের পাতানো কমিটি গঠনের খবর শুনে আমার লোকজন তড়িঘড়ি করে মনোনয়ন পত্র জমাদানের শেষ দিন আমার জন্য একটি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিয়েছেন। আমি চাই নির্বাচন হোক। অভিভাবকদের সুচিন্তিত ভোট ও মতের প্রতিফলন ঘটুক।
উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি, ইউপি সদস্য ও বর্তমান গভর্ণিং বডির সদস্য ওমর ফারুক রুবেল বলেন, কিছু বিতর্কিত লোক মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে শুনেছি। আমি যেহেতু বর্তমান কমিটিতে আছি এবং পূণরায় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছি, সেহেতু এখন কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে চাইনা।
নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির সিন্ডিকেটের পাতানো কমিটি গঠনের পাঁয়তারার সত্যতা নিশ্চিত কর বলেন, আমি সাবেক কমিটির দাতা সদস্য ছিলাম। তাছাড়া বিদ্যালয়টির একশ' গজের মধ্যে আমার নবাবপুর ইউনিয়ন পরিষদ। আমি চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন দাতা সদস্য হয়েও নির্বাচনের খবর জানিনা। তাহলে কত গোপনে সিন্ডিকেটের পাতানো কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলছে তা সহজে বুঝা যায়। আমার কাছে বেশ কয়েকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমি নিজেও হতাশ হয়েছি। একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্ণিং বডির কমিটি গঠন নিয়ে এমন বিতর্ক আমি আশা করিনি।
পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, নিয়ম মেনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিযেছি। যারা অভিযোগ করেছেন প্রচারণার সময় হয়তবা তাদের সন্তানরা শ্রেণি কক্ষে উপস্থিত ছিলেননা। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসার মো. নূরুল আমিন বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নিয়ম মনে নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাতানো নির্বাচনের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
সিএন/৯০