অনলাইন ডেস্ক।।
কুমিল্লায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে কলেজছাত্র জামিল হাসান অর্নব হত্যার ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের বাড়িঘরে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২৫ জনের নাম-পরিচয় সনাক্ত করেছে। এ ঘটনায় আরও ২০/২৫ জনের জড়িত থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডসহ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিমের অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনার নেতৃত্বদানকারী শুটার ছাত্রলীগকর্মী রাব্বীসহ তার সহযোগী কয়েকজন পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। জেলা পুলিশের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে এ ঘটনায় শনিবার (১৬ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা ঝর্না আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হতে পারে। গতকাল বিকালে নিহতের জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কলেজছাত্র অর্নবের লাশ বাড়িতে আনার পর মানুষের ভিড়। এদিকে পরিবারের বড় সন্তান অর্নবকে হারিয়ে তার বাবা-মা ও স্বজনরা অনেকটা পাগলপ্রায়। অর্নবের মা ঝর্ণা আক্তার ছেলের নাম ধরে কান্নায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। ঝর্না আক্তার বলেন, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে অর্নব সবার বড়। এই শোক আমরা কেমনে সইব। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে।
এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে অর্নবের লাশ শনিবার দুপুরে শাসনগাছা তাদের বাড়িতে আনা হয়। লাশ দেখে নিহতের স্বজন ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের তার সহপাঠীসহ এলাকার লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার লাশ একনজর দেখার জন্য বাড়িতে শোকার্ত মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
নিহতের বাবা আজরুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে ঘরে ফিরছিল। বেলা সোয়া দুইটা থেকে শাসনগাছা বাস টার্মিনালের মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শাসনগাছা মধ্যমপাড়া ও মোল্লাবাড়ি পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। তখন ডাকবাংলো সড়ক দিয়ে নামাজ পড়ে আসার পথে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি তার বুকে লাগে। ঘটনাস্থলেই আমার ছেলেটা মারা গেছে। আমার ছেলের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে পড়তো। পাশাপাশি সে শাসনগাছা বাস টার্মিনালে সততা পরিবহনের বাস কাউন্টারে পার্ট টাইম কাজ করতো। তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। শনিবার বিকালে নামাজে জানাজা শেষে নিহত অর্নবের লাশ শাসনগাছা এলাকায় তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নেয় এবং তারা ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এর আগে শুক্রবার কুমিল্লা শহরতলির শাসনগাছা বাস টার্মিনালের মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একই এলাকার মোল্লাবাড়ি ও মধ্যমপাড়া এলাকার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এতে মধ্যমপাড়া দপাদার বাড়ির আজহারুল ইসলামের ছেলে অর্নব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরও তিনজন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, থানা ও ডিবি পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে ২৫ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় খলিল মিয়া ও রিয়াজ নামে দুই জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, নিহত অর্নবের মা ঝর্না আক্তার বাদী হয়ে ২৫ জনকে এজাহারনামীয় ও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। রাতেই মামলা রেকর্ড হবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, শুটার রাব্বীসহ কিলাররা পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে জন্য পুলিশের একাধিক টিমের অভিযান অব্যাহত আছে।
এসকেডি/অননিউজ