আজ ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, দুপুর ১:০২

সোনাগাজীতে ঐতিহ্য হারিয়ে চলছে রমরমা সালিশ বাণিজ্য

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

সোনাগাজী, ফেনী প্রতিনিধি।।
ফেনীর সোনাগাজীতে একসময়ের ঐতিহ্য হারিয়ে চলছে এখন রমরমা সালিশ বাণিজ্য। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ছোটখাটো বিরোধ মীমাংসা করতেও পেশাদার সালিশদারদের শরনাপন্ন হতে হয় কাউকে কাউকে। ক্ষেত্রবিশেষে সালিশদারদের একদিনের হাজিরা মাথাপিছু দিতে হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। সোনাগাজীতে অধিকাংশ বিরোধ জমি নিয়ে। এতে সালিশদারের জন্য যেমনি গুণতে হয় টাকা, তেমনি জমি পরিমাপের আমিন ও তাদের সহকারিদের জন্যও গুণতে হয় টাকা। ৫-৬ হাজার টাকা করে দিতে হয় আমিনদের প্রতিদিনের হাজিরা। সালিশদার ও আমিনদের প্রতিদিনের হাজিরা গুণতে গুণতে অনেকেই সালিশদারদের ওপর আস্থা হারিয়ে লেজগুটিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই বছরের পর বছর আদালত সহ বিভিন্ন সেবামূলক দফতরে ঘুরছেন। সোনাগাজী উপজেলায় ৫০-৬০জনের একটি সালিশদার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যাদের পেশা ও নেশাই হচ্ছে সালিশ করা। এদের মধ্যে কেউ কেউ রয়েছেন ধূর্ত প্রকৃতির। যারা দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করেন। আবার কেউ কেউ সালিশদারদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন।

গ্রামের শৃঙ্খলা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আবহমান কাল থেকে চলে আসা এক ব্যবস্থার নাম সালিশ। যারা সালিশ করতেন সোনাগাজী অঞ্চলে তাদের বলা হত “হানছাত”। পঞ্চায়েত শব্দ থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। যে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আদালতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়, সে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে সালিশদারগণ ক্ষেত্র বিশেষে সময় নেন মাত্র কয়েক ঘন্টা।

গরুতে ফসল খাওয়া, চুরি, জমি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহ, তালাক, বউ পিটানো থেকে শুরু করে খুন খারাবির মত ফৌজদারী অপরাধের বিচারও এই সালিশে সমাধান করা হত।

ফতোয়ার দরকার হতে পারে এরকম সালিশ হলে মসজিদের ইমাম সাহেব, সাজা কার্যকরের জন্য এলাকার চৌকিদারকে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত রাখা হত। বেশির ভাগ সময়ে রায় হত- নাকে খত, কানে ধরে উঠবস, জুতাপেটা, জুতার মালা, অর্থদণ্ড ও সমাজচ্যুতি। বিচার পছন্দ না হলে আপিলের ব্যবস্থা ছিল,একে বলা হত ছানি বিচার। গ্রামের নিস্তরঙ্গ জীবনে এক শ্রেণীর মানুষের কাছে ব্যাপক বিনোদন হিসাবে দেখা দিত নারী সংক্রান্ত সালিশগুলো। বিশেষ করে প্রেম, পরকিয়ার সালিশ হলেতো উৎসুকজনতার জায়গা সংকুলান করাই মুশকিল হত।

এতদঞ্চলে বিখ্যাত সালিশদার ছিলেন মাওলানা ইলিয়াস চেয়ারম্যান, প্রফুল্ল বাবু,আব্দুল হক মেম্বার, ইলিয়াস চেয়ারম্যান, মন্নান চেয়ারম্যান, এনাম মিয়া, নেভি এনাম, তাহের মিয়া, ভুলু মিয়া, আরু মিয়া চেয়ারম্যান, ছাত্তার মোকতার, নুরুল ইসলাম জমাদার, শফি মেম্বার, আবদুল মালেক পন্ডিত, নাদরেজ্জামান পন্ডিত, ইস্রাফিল ডিলার, মোশাররফ কমান্ডার, নাসির কমান্ডার, হাফেজ মোস্তফা, বজলেছোবহান চৌধুরী, ছায়েদ উল্যাহ মেম্বার, মোশাররফ চেয়ারম্যান, আব্দুর রব চেয়ারম্যান , নেতা এছহাক, মফিজ চেয়ারম্যান, মাহবুব চেয়ারম্যান,শাহ আলম মিয়া, হানছাত তাহের, মোস্তফা মিয়া, ছুফিয়ান মেম্বার প্রমুখ সালিশ করতেন। তাদের অনেকেই বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তারাও দুর্বৃত্তায়নের কাছে হার মেনে এখনকার বাণিজ্যিক সালিশে যাননা।

দেশ স্বাধীনের আগে সালিশ করতেন, আলি আজ্জম মেম্বার, মজিবুল হক সারেং, হেকিম সাহেব। সে সময় সামাজিক ন্যায়বিচার ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় সালিশ এতই গ্রহনযোগ্য পন্থা ছিল যে, থানা, কোর্ট কাচারি থেকে অনেক মামলা মিমাংসা করার জন্য সালিশদারদের কাছে হস্তান্তর করা হত। তারাতো কেউ বেঁচে নেই। ৯০ পরবর্তীতে সালিশ দরবার চলে যায় রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও অপেক্ষাকৃত তরুনদের হাতে। একপর্যায়ে এতে অর্থের লেনদেন যুক্ত হয়ে সালিশ তার আগের নিরপেক্ষতা ও জৌলুশ হারায়। এখন চলছে রমরমা বাণিজ্য। যার ফলে কেউ কেউ সালিশদারদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আর্থিক লোকসানের শিকার হলেও হয়রানির ভয়ে সালিশদারদের পেছনে ঘুরে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। ফলে কেউ কেউ সামাজিক ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ব্লগার গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেন, আগের দিনের সালিশদারগণ ছিলেন এলাকার সর্বমান্য ও দেশের মাথা। বর্তমানে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও প্রভাবশালী সালিশদারদের আর দেখা যায় না। এখন সালিশ বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে।

সিএন/৯০

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin

আরো পড়ুন

সর্বশেষ খবর

পুরাতন খবর

সোম মঙ্গল বু বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Scroll to Top