গাজী মামুন, লালমাই প্রতিনিধি ।।
কুমিল্লার লালমাইয়ে ‘অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট’ এনজিও-র পরিচয়ে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে একটি প্রতারক চক্র। সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে এনজিও-র ভাড়াকৃত অফিসে ঋণ নিতে এসে গ্রাহকরা দেখেন অফিসটি তালাবদ্ধ। টাকা-পয়সা নিয়ে অফিস গুটিয়ে পালিয়েছে প্রতারকরা। এ-সময় সেখানেই কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রাহকরা।
জানা যায়, দশ দিন আগে উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের হরিশ্চর চৌরাস্তা সংলগ্ন হরিশ্চর টু ভুশ্চি সড়কের পাশে শহিদ মিয়া নামে একজনের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিস করে প্রতারক চক্র। সেখানে এনজিও-র সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। পরে তারা গত ১০ দিন ধরেই অফিসের আশেপাশের এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। ফলে প্রতারকদের পাতানো ফাঁদে পা দেয় গ্রামের সহজ সরল নারী-পুরুষরা৷ যাদের মধ্যে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই নারী গ্রাহক।
গ্রাহকরা জানান, উপজেলার হরিশ্চর, মধুরচর, শিকারীপাড়া, উৎসবপদুয়া, হাড়গিলা, ফতেহপুর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫০ জন গ্রাহক সংগ্রহ করে তাদেরকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ১০ শতাংশ করে প্রায় ৫০ লাখ জামানত সংগ্রহ করে এনজিও-র পরিচয় দেওয়া প্রতারক চক্রটি। সোমবার ঋণ দেওয়ার কথা, অফিসে গিয়ে দেখেন সব নিয়ে পালিয়েছে তারা। পরে নিরুপায় হয়ে এ বিষয়ে অ্যাকশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ও বাড়ির মালিক কে দায়ী করে লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
হাড়গিলা গ্রামের রাবেয়া বেগম নামে এক গ্রাহক জানান, “তিন লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৩০ হাজার ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। সোমবার তার ঋণের তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু সকালে অফিসে এসে দেখতে পান অফিসে কেউ নেই। অফিসটি তালাবদ্ধ। তাদের ব্যবহৃত ফোন নম্বরগুলোও বন্ধ।”
আহসান হাবিব নামে আরেক গ্রাহক জানান, “আমরা টাকা জমা দেওয়ার আগে বাড়ির মালিক শহিদ মিয়া কে জিজ্ঞেস করলে তিনি সম্মতি দেন। কিন্তু এখন বাড়ির মালিক বলেন যে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এনজিও-র পরিচয় দেওয়া কোনো কর্মকর্তার এনআইডি কার্ড বা কাগজপত্র কিছুই নেই।”
এ বিষয়ে বাড়ির মালিক শহিদ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে টাকা জমা দেওয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করিনি বরং তিন-চার জন আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি তাদেরকে না করে দিয়েছি। এনজিও-র পরিচয়ে লোকগুলো গত শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) আমার বাসার তিনটি রুম অফিস হিসেবে ভাড়া নেয়। এখানে সবাই থাকতো না, অফিসে একজন লোক বসে থাকতো। অন্যরা এখানে নিয়মিত বসতো না। এনআইডি এবং ছবির কথা বললে তারা বলে যে আমাদের কোম্পানি আপনার সাথে সরাসরি চুক্তিপত্র করবে। এক্ষেত্রে তারা সাত দিনের সময় নেয়। এরইমধ্যে আমাকে না জানিয়ে আজকে তারা মানুষের টাকা নিয়ে চলে গেছে।”
লালমাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহসান মুরাদ বলেন, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।