
বগুরা প্রতিনিধি।।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রিয় সেক্রেটারি জেনারেল জননেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণার পর সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে। সমগ্র জাতি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রহর গুনছে। তবে, যার জন্য হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিলো সেই কাংখিত সংষ্কার এবং গণহত্যার বিচার না করে যেন তেন নির্বাচনের মাধ্যমে কোন দলকে ক্ষমতায় বসানো হলে জনগণ সেটা মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে অবশ্যই সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জনগণ যেন বিনা বাধায় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে ফিরে আসতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আসন্ন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই সারাদেশে আসন ভিত্তিক প্রার্থীদের নাম ঘোষনা করা হয়েছে। সংগঠনের সকল নেতাকর্মিকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শনিবার দুপুরে বগুড়া শহরের শাহওয়ালি উল্লাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী বগুড়া অঞ্চলের কর্মপরিষদ সদস্যদের দিনব্যাপী শিক্ষা শিবিরে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষাশিবিরে আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী বগুড়া অঞ্চলের টীম সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, টীম সদস্য অধ্যাপক আব্দুর রহীম, পাবনা জেলা আমির অধ্যাপক তালেবুর রহমান, জয়পুরহাট জেলা আমির ডা: ফজলুর রহমান সাইদ, বগুড়া জেলা আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল হক সরকার, বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল, সিরাজগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা শাহিনুর আলম।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামীলীগ দেশ ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। মানুষের কোন অধিকার ছিলো না। অবশেষে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। হাসিনার পলায়নের মধ্যদিয়েই মূলত: দেশে আওয়ামীলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে দেশের কোথাও আওয়ামীলীগ কিম্বা তাদের অঙ্গসংগঠনের তৎপরতা দৃশ্যমান নেই। এই মুহুর্তে বিএনপি এবং জামায়াত দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। দেশের মানুষ দুই দলের যেকোন একটা দলকে আগামীতে ক্ষমতায় দেখতে চায়। জামায়াতে ইসলামী জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে দেশর জন্য কাজ করতে চায়। এ লক্ষ্যে আমাদের নেতাকর্মিরা সারাদেশে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। নেতাকর্মিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একমাত্র জামায়াতে ইসলামী সৎ, যোগ্য, দূর্নীতিমুক্ত নেতৃত্ব তৈরি করছে। সৎ এবং দূর্নীতিমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আমাদেরকে জনগণের ভালোবাসা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় গুনাবলী অর্জন করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোটের মাঠে প্রানপণ লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, পছন্দ হোক বা না হোক প্রতিটি নেতাকর্মিকে তাকেই বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এটিএম আজহারুল ইসলামের রায়ের মাধ্যমে পরিস্কার হয়েছে, শেখ হাসিনা বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। আপিল বিভাগ তাদের পর্যবেক্ষণে পরিস্কার বলেছেন, ওই বিচারে দেশী বা বিদেশী কোন আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি। ন্যায় বিচারের কোন প্রকিয়া অনরুসরণ করা হয়নি। সুতরাং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যারা হত্যা করেছে সেই বিচারের সাথে যারাই জড়িত সকলকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে এখনো সরকারের ভেতরে-বাইরে যেসকল ফ্যাসিবাদের দোসররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিবাদের দোসররা একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে প্রবেশ করে নতুন করে ফ্যাসিবাদের জন্ম দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু দেশের মানুষ আর কোন ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসতে দিবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন তিনি।
শিক্ষাশিবিরে বগুড়া শহর, বগুড়া জেলা, জয়পুরহাট জেলা, সিরাগঞ্জ জেলা এবং পাবনা জেলা জামায়াতের পুরুষ ও মহিলা কর্মপরিষদ সদস্যরা অংশগ্রহন করেন।